নিজস্ব প্রতিবেদক :এভারকেয়ার হাসপাতালে কেবিনে চিকিৎসকদের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা জানাতে গিয়ে আজ রবিবার গণমাধ্যমকে তিনি একথা জানান।
৭৭ বছর বয়েসী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগে ভুগছেন। অসুস্থতার মধ্যে গুলশানে ‘ফিরোজা‘য় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছিল। পরে তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শক্রমে গতকাল শনিবার এভারকেয়ারে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন।
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম কেবিনে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকালকের চেয়ে আজকে উনার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। হাসপাতালের বিশেষ চিকিৎসক অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। অধ্যাপক সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড আগে থেকে তার এই চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।’ গতকাল ভর্তি হওয়ার পর মেডিক্যাল বোর্ডের একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল ভর্তি হওয়ার পরে ম্যাডামের বেশি কিছু পরীক্ষা মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শক্রমে করা হয়েছে। ওইসব পরীক্ষার রিপোর্ট আসা শুরু করেছে। মেডিক্যাল বোর্ড আজ রবিবার সন্ধ্যায় কোনো একটা সময়ে বসবে এবং রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে উনার পরবর্তী পর্যায়ে যে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন তা করবে। তবে প্রাথমিকভাবে মেডিক্যাল বোর্ড গতকাল একদফা বসে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নিয়েছে। সকাল বেলাও বোর্ডের কয়েকজন সদস্য উনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার কিছু অসুস্থতা ছিল, কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। যার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে এখানে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসাতে উনি মোটামুটি রেসপন্স করছেন।’
হাসপাতালে খালেদা জিয়া কয়দিন থাকতে পারেন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘এটা মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে, উনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। কাজেই এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রোগীর অসুস্থতা সম্পর্কে মিডিয়াতে বলা ঠিক না। খালি এইটুকু জানানো যেতে পারে যে, উনার হার্টের জটিলতা, লিভারের জটিলতা, কিডনির জটিলতা ছিল এবং আছে। সেগুলোর কোনো কোনোটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছিল জন্য চেকআপ ও চিকিৎসার জন্য উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উনি কেবিনে আছেন। কেবিনে উনার জন্য স্পেশালিস্ট এমআইএসটি নার্স-ডাক্তার সাহেবরা তার দেখাশোনা করছেন। কেবিনে মানে এমনি শুয়ে থাকার তা না। সি ইজ আন্ডার স্ট্রিক সুপারভেশন।’
জাহিদ জানান, অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিক্যাল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হচ্ছেন অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জিয়াউল হক এবং অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম।
এ ছাড়া লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিক্যাল বোর্ডে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শর্মিলা রহমান সিঁথি। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান সবসময় খোঁজ রাখবেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।